পবিত্র কোরআন শরিফে লেখা আছে মানুষ যখন বেহেশত পাবে তখন তার বুকের ভেতর থেকে সব প্রতিহিংসা সরিয়ে দেওয়া হবে। কথাটি অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়, এই পৃথিবীতেই যদি একজন মানুষ তার বুকের ভেতর থেকে সব প্রতিহিংসা দূর করতে পারে তাহলে পৃথিবীটাই তার কাছে বেহেশত হয়ে যেতে পারে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি আমাদের দেশে যে ভয়ঙ্কর হত্যাকান্ড এবং নির্যাতন চালিয়েছে সেটি আমি নিজের চোখে দেখেছি এবং সে কারণে আমার বুকের ভেতর এই রাষ্ট্রটির জন্য যে তীব্র ঘৃণা এবং প্রতিহিংসার জন্ম হয়েছে আমি কোনোদিন তার থেকে মুক্তি পাব না। এই রক্তলোলুপ ভয়ঙ্কর দানবদের কারণে পৃথিবীটা আমার জন্য কখনো বেহেশত হতে পারবে না। সব সময়ই এই দেশ এবং এই দেশের দানবদের জন্য আমার বুকে ঘৃণা এবং প্রতিহিংসার আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকবে।

Muhammed Zafar Iqbal

Related Quotes

১৯৭১ সালের মে মাসের ৫ তারিখ বিকালবেলা পিরোজপুরের বলেশ্বরী নদীর ঘাটে পাকিস্তান মিলিটারি আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। পুলিশ প্রশাসনের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা হিসেবে শুধু আমার বাবাকেই নয়, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা হিসেবে জনাব আব্দুর রাজ্জাক এবং জনাব মীজানুর রহমানকেও একই সঙ্গে গুলি করে তাদের সবার মৃতদেহ বলেশ্বরী নদীতে ফেলে দিয়েছিল।

পিরোজপুরের নদীতে জোয়ার-ভাটা হয় তাই এই তিনজন তেভাগ্য মানুষের মৃতদেহ দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে উত্তরে এবং ভাটার পানিতে দক্ষিণে নেমে আসছিল। তিন দিন পর আমার বাবার মৃতদেহ কাছাকাছি একটা গ্রামের নদীতীরে এসে আটকে গিয়েছিল। গ্রামের মানুষরা আমার বাবাকে চিনত, তাদের মনে হলো, ‘আহা, এই মৃতদেহটি মাটি চাইছে।’ তাই তারা ধরাধরি করে আমার বাবার মৃতদেহটি তুলে নদীতীরে কবর দিয়েছিল। অন্য দুজনের সেই সৌভাগ্য (!) হয়নি এবং তাদের মৃতদেহ শেষ পর্যন্ত নদীতে ভেসে হারিয়ে গিয়েছিল।
Muhammed Zafar Iqbal
1971liberation-war
আজকাল আমার নিজের ডিকশনারি থেকে ‘মেধাবী’ শব্দটা তুলে দিয়ে সেখানে ‘উৎসাহী’ শব্দটা ঢুকিয়েছি। আমি দেখেছি, উৎসাহ থাকলে সবই সম্ভব। সত্যি কথা বলতে কী, আমি আমার পরিচিত জগতের সব মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। এক ভাগ হচ্ছে যারা উৎসাহী; অন্য ভাগ হচ্ছে যাদের কিছুতেই উৎসাহ নেই, যাদেরকে ঠেলাঠেলি করে নিয়ে যেতে হয়। উৎসাহীরা পৃথিবীটাকে চালায়, বাকিরা তার সমালোচনা করে!
Muhammed Zafar Iqbal
যিনি জাতিকে এক বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা। যিনি বুদ্ধি খাটিয়ে স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা, যিনি সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তিনিতো মুক্তিযোদ্ধাই। তাহলে যে মানুষটি তাঁর প্রিয় মুরগিটা জবাই করে ভাত রেঁধে একবেলা দশজন মুক্তিযোদ্ধাকে খাইয়েছেন তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা নন? যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা নন? যিনি মুক্তিযোদ্ধাকে সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিজের যুবতী অবিবাহিত কন্যার সঙ্গে শুইয়ে জামাতার পরিচয় দিয়েছেন তিনিও কি মুক্তিযোদ্ধা নন? মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, পথের ফকির হয়েছেন, আত্নীয়স্বজন হারিয়েছেন তারাও কি মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া আর কিছু? যাদের এসব কিছুই হয়নি অথচ নয়টি মাসের দিবারাত্রি যাদের শারীরিক ভাষা ছিল লড়াকু, জীবনবাজি ধরে যারা গুনেছে প্রতিক্ষার প্রহর, স্বাধীন পতাকা পাওয়ার আশায়, তারাও কি মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া আর কিছু?
Abul Hayat
1971