যিনি জাতিকে এক বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা। যিনি বুদ্ধি খাটিয়ে স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা, যিনি সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তিনিতো মুক্তিযোদ্ধাই। তাহলে যে মানুষটি তাঁর প্রিয় মুরগিটা জবাই করে ভাত রেঁধে একবেলা দশজন মুক্তিযোদ্ধাকে খাইয়েছেন তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা নন? যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা নন? যিনি মুক্তিযোদ্ধাকে সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিজের যুবতী অবিবাহিত কন্যার সঙ্গে শুইয়ে জামাতার পরিচয় দিয়েছেন তিনিও কি মুক্তিযোদ্ধা নন? মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, পথের ফকির হয়েছেন, আত্নীয়স্বজন হারিয়েছেন তারাও কি মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া আর কিছু? যাদের এসব কিছুই হয়নি অথচ নয়টি মাসের দিবারাত্রি যাদের শারীরিক ভাষা ছিল লড়াকু, জীবনবাজি ধরে যারা গুনেছে প্রতিক্ষার প্রহর, স্বাধীন পতাকা পাওয়ার আশায়, তারাও কি মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া আর কিছু?

Abul Hayat

Related Quotes

স্বাধীনতার যুদ্ধের প্রসঙ্গে বলতে বা লিখতে গেলে জনগণের ভূমিকা সম্বন্ধে সচরাচর যা বলা হয়ে থাকে, তা হল-বাংলাদেশের ছাত্র, কৃষক, জনতা, পেশাজীবী, শ্রেণীগোত্র নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারপর আলোচনার চরিত্র ক্রমাগত সীমিত হয়ে আসে অল্প কিছু রাজনৈতিক নেতা,কিছু সামরিক ব্যাক্তিত্ব, কিছু বুদ্ধিজীবী এবং আরও অল্প কিছু নির্বাচিত ব্যাক্তির মধ্যে। সাড়ে সাত কোটি জনগণের জন্য বরাদ্দ রইল ওই একটি লাইন, কখনোবা একটি প্যারাগ্রাফ বড়জোর।
Qamrul Hassan Bhuiyan
1971
১৯৭১ সালের মে মাসের ৫ তারিখ বিকালবেলা পিরোজপুরের বলেশ্বরী নদীর ঘাটে পাকিস্তান মিলিটারি আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। পুলিশ প্রশাসনের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা হিসেবে শুধু আমার বাবাকেই নয়, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা হিসেবে জনাব আব্দুর রাজ্জাক এবং জনাব মীজানুর রহমানকেও একই সঙ্গে গুলি করে তাদের সবার মৃতদেহ বলেশ্বরী নদীতে ফেলে দিয়েছিল।

পিরোজপুরের নদীতে জোয়ার-ভাটা হয় তাই এই তিনজন তেভাগ্য মানুষের মৃতদেহ দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে উত্তরে এবং ভাটার পানিতে দক্ষিণে নেমে আসছিল। তিন দিন পর আমার বাবার মৃতদেহ কাছাকাছি একটা গ্রামের নদীতীরে এসে আটকে গিয়েছিল। গ্রামের মানুষরা আমার বাবাকে চিনত, তাদের মনে হলো, ‘আহা, এই মৃতদেহটি মাটি চাইছে।’ তাই তারা ধরাধরি করে আমার বাবার মৃতদেহটি তুলে নদীতীরে কবর দিয়েছিল। অন্য দুজনের সেই সৌভাগ্য (!) হয়নি এবং তাদের মৃতদেহ শেষ পর্যন্ত নদীতে ভেসে হারিয়ে গিয়েছিল।
Muhammed Zafar Iqbal
1971liberation-war